আকুয়ারিয়ামের মাছের রোগ / অসুখ চেনার উপায় ( fish disease )

আপনি যদি আকুয়ারিয়ামে মাছ পুষতে চান , আপনার মাছেদের ভালো রাখতে চান , তাহলে আপনাকে মাছেদের রোগ সম্বন্ধে ভালোভাবে জানতে হবে । না হলে দেখবেন মাছ মারা যাচ্ছে এবং এই ভাবে কিছুদিন চলার পরে আপনার মাছ পোষার শখটি নষ্ট হয়ে যাবে । তাই আকুয়ারিয়ামে মাছ মাছ রাখতে হলে মাছের অসুখ সম্বন্ধে ভালো ধারনা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন । 







প্রথমেই বলি , আকুয়ারিয়ামে যত মাছ মারা যায় ,তার বেশীরভাগটাই মারা যায় আকুরিয়ামের জল খারাপ হবার কারনে । প্রথমে আকুরিয়ামের জল খারাপ হয় ,তারপরে ওই জলে থাকা মাছেদের ইনফেক্সান হয় । তাই আকুরিয়ামের জল ভালো রাখাটা খুব জরুরী । 



এখন দেখে নেওয়া যাক মাছের অসুখ চিনবেন কিভাবে ? 

যেহেতু এখনো পর্যন্ত মাছের রোগ নির্ণয়ের জন্য তেমন কোন উন্নত যন্ত্রপাতি পাতি পাওয়া যায় না তাই মাছ এর রোগ বা অসুখ চেনার জন্য আমাদের চোখই ভরসা । আকুরিয়ামের মাছ যদি জলের মধ্যে স্বচ্ছন্দে ঘোরাফেরা না করে বা তাদের আচরনের মধ্যে কোন রকম অস্বাভাবিকতা দেখা যায় তাহলে বুঝে নিতে হবে যে মাছটি বা মাছগুলি ওই আকুরিয়ামের মধ্যে তাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়  পরিবেশ পাচ্ছে না বা মাছ গুলি অসুস্থ হয়ে পড়েছে । আকুয়ারিয়ামের  মধ্যে থাকা মাছেদের চলা ফেরা দেখেই আমাদের অসুখ চিনে নিতে হবে  । সবার আগে আমাদের জেনে নিতে হবে কোন জাতের মাছের চলাফেরা কেমন ধরনের হয় , তার কারন হল আমরা আকুয়ারিয়ামে যে সমস্ত ধরনের বা  জাতের মাছ রেখে থাকি তাদের সবার চলাফেরা এক ধরনের হয় না । বিভিন্ন জাতের মাছের চলা ফেরার মধ্যে রকমফের হয় । আকুরিয়ামের মাছ যদি অসুস্থ হয় তাহলে তার চলাফেরা এবং আচরনে পরিবর্তন হবেই । মাছের যে সমস্ত আচরন গুলি দেখে ,মাছের অসুস্থতা সম্বন্ধে সহজেই ধারনা করা যায় সেগুলি হল ঃ



 ১) মাছ বসে থাকা বা ঝিমিয়ে পড়া  ঃ অনেক সময়ই দেখবেন আকুরিয়ামের মধ্যে মাছগুলি চলা ফেরা না করে নিচে বসে থাকছে বা একটু আধটু নড়া চড়া করেই আবার বসে পড়ছে । মাছের এই রকম আচরন অনেকগুলি কারনে হতে পারে । আকুরিয়ামের মাছের এই ধরনের আচরনের প্রধান যে কারন , সেটি হল জলের নাইট্রোজেনের পরিমান বেশী থাকা । সাধারনত  আকুরিয়ামে জলে নাইট্রোজেনের পরিমান বেশী হয় যদি আকুরিয়ামের ফিল্টার ম্যাচিওর না হয়ে থাকে তবেই । ফিল্টার ম্যাচুরেসান সম্বন্ধে ভালোভাবে জানার জন্য  আমার লেখা  " ফিল্টার ম্যাচুরেসান  "  দেখে নিতে পারেন ।  একদম নতুন জলে মাছ ছাড়লেও মাছ আকুয়ারিয়ামের নিচে বসে থাকতে পারে । অনেক সময় মাছ মাছ কেনা থেকে মাছ আকুরিয়ামে ছাড়া পর্যন্ত বেশী সময় প্যাকেট বন্দি থাকলে মাছ অ্যাকুরিয়ামে ছাড়ার পরে বেশ কিছুক্ষন নিচে বসে থাকতে পারে । অ্যাকুরিয়ামে মাছ ছাড়ার সময় সঠিক পদ্ধতি মেনে না ছাড়লেও মাছ অ্যাকুরিয়ামের নিচে বসে থাকতে পারে । অ্যাকুরিয়ামের জল সঠিক নিয়ম মেনে বদল না করলেও মাছ নিচে বসে থাকতে পারে । মনে রাখবেন ২ থেকে৩ ঘন্টার বেশী সময় মাছ অ্যাকুরিয়ামে বসে থাকলে প্রতিকার করতে হবে । অ্যাকুরিয়ামে মাছ ভালোভাবে না চলাফেরা করে যদি বেশীর ভাগ সময় বসে থাকার লক্ষন দেখতে পান তাহলে আপনি ১০০ ভাগ নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনার মাছ আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে কোন রোগে আক্রান্ত হতে চলেছে । মনে রাখবেন মাছের অসুবিধা আপনি যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন , আপনার মাছ এর রোগ হবার সম্ভাবনা তত কম হবে । 



 ২) মাছের গা চুলকানো ঃ  অনেক সময় আপনি দেখতে পাবেন যে অ্যাকুরিয়ামের মধ্যে থাকা মাছ গুলি অ্যাকুরিয়ামের ভিতরে থাকা ফিল্টার বা পাথর বা গাছপালা বা অন্য কোন সাজানোর জিনিসপত্রের গায়ে বারবার নিজের গা ঘষছে । প্রকৃতিগত ভাবে মাছ নিজের গা পরিষ্কার রাখার জন্য মাঝে মধ্যে নিজের গা অ্যাকুরিয়ামের ভিতরে থাকা কোন অবজেক্ট এর গায়ে ঘসে থাকে , এটি স্বাভাবিক পক্রিয়া । স্বাভাবিক ভাবে জাতি বিশেষে মাছ নিজের গা সারাদিনে ১০ থেকে১২ বার ঘষে থাকে এটা কোন ব্যাপার নয় কিন্তু যখন কোন মাছ খুব বেশী পরিমানে নিজের গা ঘসতে থাকে তখন সেটা কোন অসুবিধার জন্য এটা নিশ্চিত থাকবেন । অ্যাকুরিয়ামের জলে নাইট্রাইট এর পরিমান বেড়ে গেলে মাছ গা চুলকাতে পারে , তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ফাঙ্গাস জনিত রোগ অথবা ব্যাক্টেরিয়া জ্নিত রোগ অথবা প্যরাসাইটস এর কারনে মাছ নিজের গা বেশী চুলকে থাকে । আপনাকে মাছের গা চুলকাবার সঠিক কারনটি বের করে স্বত্বর প্রতিকার করতে হবে না হলে রোগটি বেড়ে গেলে মাছ বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে ।  বিঃ দ্রঃ -  হোয়াইট স্পট রোগ হলে মাছ বেশী গা চুলকে থাকে ।


৩) মাছের নড়াচড়া কম ঃ অ্যাকুরিয়ামের মাছ যে কারন গুলির জন্য নড়াচড়া কম করে সেগুলি হোল , মাছ যদি দুর্বল হয়ে পড়ে , অ্যাকুরিয়ামের জল যদি বেশী ঠাণ্ডা হয়ে যায় , অথবা কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে । মাছের খাবারের পরিমান যদি কম দেওয়া হয় বা যে জাতের মাছ আপনি রেখেছেন সেই মাছের  প্রয়োজনীয় প্রোটিন  যদি আপনার দেওয়া খাবারে না থাকে বা প্রোটিনের পরিমান কম থাকে তাহলে মাছ দুর্বল হয়ে পড়ে । মনে রাখবেন মাছ দুর্বল হলে মাছের রোগে আক্রান্ত হবার চান্সও তত বেশী হবে । অ্যাকুরিয়ামের জল যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশী ঠাণ্ডা হয়ে যায় তাহলে মাছ নড়াচড়া কম করে । মাছ যদি কোন ফাঙ্গাস বা ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়াল জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তা হলেও মাছ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম নড়াচড়া করে থাকে । বেশী বা অতিরিক্ত ছোটাছুটি করাও রোগের লক্ষন ।


৪) খিদে কম ঃ  মাছের খিদে কমে যাওয়া মাছের রোগে পড়ার একটি পুর্ব লক্ষণ । অ্যাকুরিয়ামের জল প্রয়োজনের তুলনায় বেশী ঠাণ্ডা হয়ে গেলে মাছ কম খায় । তবে যে কারন টি মাছের খিদে কমে যাবার জন্য সব থেকে বেশী হয় , তা হল মাউথ ফাঙ্গাস রোগ । আমার " মাছের অসুখ "লেখাটি দেখে নিতে পারেন , সেখানে মাছের রোগ সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা করা আছে ।


আপনি যদি মাছের বাহ্যিক ব্যাবহারের এই সামান্য বিষয় গুলি একটু ভালোভাবে খেয়াল করে চলতে পারেন তা হলে আপনি নিশ্চিত থাকুন যে আপনি অ্যাকুরিয়ামে মাছ ভালো রাখার ব্যাপারে ৯০ ভাগ এগিয়ে গেলেন । বাকি ১০ ভাগ আপনার বা আমার হাতে নয় তার কারন হল মাছের এমন কিছু রোগ আছে যা মাছের শরীরের ভিতরে হয় যা বাইরে থেকে সহজে বোঝা যায় না , এই ব্যাপারে আবার অন্য সময় আলোচনা করব , এখন এই পর্যন্ত।


Comments

Popular posts from this blog

গাপ্পি মাছ ( guppy fish )

অ্যাকুরিয়ামের মাছের অসুখ ( aquarium fish diseases)

মাছ কি খেতে ভালো বাসে / অ্যাকুরিয়ামের মাছ কি ধরনের খাবার সব থেকে পছন্দ করে ( aquarium fish food ) ?