গোরামি মাছের বাচ্চা করার পদ্ধতি ( gourami breeding process )

 


অ্যাকুরিয়ামের মাছেদের মধ্যে গোরামি জাতের মাছ খুবই জনপ্রিয় । এই মাছ বেশ কয়েকটি জাতের পাওয়া যায় ,যেমন ব্লূ গোরামি , থ্রী স্পট গোরামি , পার্ল গোরামি ইত্যাদি । আপনি বাড়িতে গোরামি মাছের বাচ্চা খুব সহজেই করতে পারেন । 

    দেখে নেওয়া যাক গোরামি মাছের বাচ্চা করার জন্য কি  কি জিনিসের প্রয়োজন হয় ।

১) ডিম পাড়ার উপযুক্ত একটি পেটে ডিম ভর্তি মেয়ে মাছ এবং একটি সুস্থ সবল প্রাপ্ত বয়েসের ছেলে মাছ ।

২) ৩০ থেকে ৪০ লিটার জল ধরে এমন একটি অ্যাকুরিয়াম বা মাটির বা প্লাস্টিকের গামলা ।

৩) একটি  খুব ভালো গুনমানের ৪ ইঞ্চি চওড়া ৮ ইঞ্চি লম্বা পলিথিন বা প্লাস্টিকের পাতলা টুকরো ।  




     সফল ভাবে গোরামি মাছের ডিম ফোটাতে হলে যে ব্যাপার গুলি খেয়াল রাখতে হবে সেগুলি হল ঃ 

১) যে জলে আপনি ডিম পাড়াতে চান সেই জলের টি ডি এস হতে হবে ১০০ থেকে ১৫০ ।     ২৫০ টি ডি এস পর্যন্ত জলেও এই মাছের ডিম ফোটানো যায় কিন্তু ১০০ থেকে ১৫০ টি ডি এস এর জলে এই মাছের ডিম যতটা ভালো ফুটবে এবং ডিম ফোটার পরে বাচ্চা ভালো থাকবে , ১৫০ টি ডি এস এর বেশি হলে ততটা ভালো হবে না । এই মাছের ডিম ফোটাতে হলে একটি একটি টি ডি এস মিটার দিয়ে জলের টি ডি এস এর পরিমান মেপে নিন । 

২) যে যায়গায় আপনি এই মাছের ডিম ফোটাতে চান সেই যায়গায় সূর্যের আলো যেন সরাসরি না পড়ে । একটু আলো ছায়া যায়গায় এই মাছের ডিম পাড়াবেন । এই জাতের মাছের ডিম জলের একেবারে উপরিতলে ভেসে থাকে তাই জলের কাছাকাছি কোন আলো ব্যাবহার করবেন না , আলো থেকে জলের উপরিতলের তাপমাত্রা যাতে বেড়ে না যায় সে দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন । 

৩) জলের তাপমাত্রা রাখবেন ২৪ থেকে ৩০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এর মধ্যে । এই তাপমাত্রার ভিতরে আপনি যে তাপমাত্রাই রাখুন না কেন তাপ মাত্রার তারতম্য যেন ১ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এর বেশী না হয় । 

৪) একটু নিরিবিলি যায়গায় এই মাছের ডিম পাড়ানো ভাল , যেহেতু এই মাছ ডিম ফোটানোর জন্য বুদবুদ এর বাসা তৈরি করে তাই এই মাছ হটাত করে ভয় পেয়ে গেলে বাসা ভেঙে যেতে পারে । তাই যেখানে এই মাছের ডিম পাড়াবেন সেখানে এমন কোন কাজ করবেন না যাতে মাছ ভয় পায় ।

৫) কোন রকম এরিয়েশান বা কোন রকম ফিল্টার ব্যাবহার করবেন না । 


 যে পাত্রে বা অ্যাকুরিয়ামে ডিম পাড়াতে চান সেখানে জল ভরুন । জল ভরার পরে ২ থেকে ৩ দিন বাসি অর্থাৎ পুরানো করুন ।  পাতলা প্লাস্টিক এর টুকরো টি পাত্রের যেকোন এক যায়গায় বেঁধে দিন । টুকরো টি এমন ভাবে রাখুন যাতে যাতে প্লাস্টিকের টুকরো টির অল্প কিছু অংশ জলে থাকে । ডিম পাড়ার সময় ছেলে মাছ টি যে বুদবুদ এর বাসা তৈরি করবে  সেটি ঐ প্লাস্টিকের গায়ে তৈরি করবে তাই খেয়াল রাখবেন প্লাস্টিকের টুকরোটি যেন বেশী নড়াচড়া না করতে পারে , প্লাস্টিক টি বেশি নড়া চড়া করলে বাসা ভেঙে যাবে । 

এর পরে ছেলে এবং মেয়ে মাছ টি এক সাথে জলে ছেড়ে দিন । এক থেকে দুই দিনের মধ্যে দেখতে পাবেন ছেলে মাছ টি বুদবুদ এর বাসা তৈরি করছে , এর পর ছেলে মাছটি মেয়ে মাছের গায়ে চাপ দিয়ে দিয়ে ডিম পাড়াবে । কিছুটা করে ডিম পাড়াবে তার পর মুখে করে ঐ ডিম গুলি নিয়ে বুদ বুদ এর বাসায় রেখে আসবে । এই ভাবে বেশ কিছুক্ষন চলতে থাকবে । ডিম পাড়ানো হয়ে গেলে সাধারনত ছেলে মাছ টি মেয়ে মাছ টিকে মারতে থাকবে তবে ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রে মারতে নাও পারে । যদি মাছের ডিম পাড়ানোর সময় আপনি উপস্থিত না থাকেন তাহলে  মেয়ে মাছের পেটের ফোলা ভাব দেখে বুঝে নিতে হবে যে ডিম পাড়া হয়ে গেছে কিনা । এই মাছের ডিম আকারে খুব ছোট পোস্তর দানার আকারের হয় এবং সাধারনত জল রঙের অথবা খুব হাল্কা হলুদ রঙের হয় তাই ডিম পাড়াবার যায়গার অল্প আলোতে  আপনি সহজে ডিম দেখতে পেতে নাও পারেন । ডিম পাড়া হয়ে গেছে নিশ্চিত হলে খুব সাবধানে মেয়ে মাছ টিকে তুলে নিন । ছেলে মাছটিকে ওখানেই রেখে দিন । ছেলে মাছটি বুদ বুদ এর বাসা এবং ডিম এর যত্ন নিতে থাকবে । 

      সাধারনত ২০ থেকে ৩০ ঘন্টার মধ্যে এই মাছের ডিম ফুটে যায় । বাচ্চা গুলি সাইজে এতই ছোট থাকে যে সহজে চোখে দেখা যায় না । বাচ্চা ফোটার ১ থেকে ২ দিন পরে বাচ্চা ভালো করে সাঁতার কাটলে তার পর বাচ্চাদের খেতে দেবেন ।  গোরামি মাছের বাচ্চা সাইজে খুব ছোট হয় , তাই এই মাছের বাচ্চাদের প্রাথমিক অবস্থায় খুব সাবধানে খেতে দিতে হবে । প্রথম ১ সপ্তাহ এই মাছের বাচ্চাদের ইনফিউজোরিয়া খেতে দিতে হবে , তার পর থেকে খুব মিহি ডাফনিয়া ৩ / ৪ বার মিহি কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে সেই মিহি ডাফনিয়া এই মাছের বাচ্চাদের খেতে দিতে হবে । মনে রাখবেন এই মাছের বাচ্চা খুব ছোট সাইজের হয় তাই তারা যাতে সহজেই ডাফনিয়া ধরে খেতে পারে , এমন সাইজের ডাফনিয়াই আপনাকে মাছের বাচ্চাদের দিতে হবে । ব্রাইন স্রীম্প এর ডিম ফুটিএও এই মাছের বাচ্চাদের আপনি দিতে পারেন , তবে মনে রাখবেন খাবার যেন মাছের বাচ্চা ভালোভাবে ধরে খেতে পারে । 

 দিনে ৩ থেকে৪ বার মাছের বাচ্চাদের খেতে দিতে হবে , খুব অল্প পরিমানে খেতে দেবেন কারন এই মাছের বাচ্চার ট্যাঙ্ক এর তলা আপনি সাইফন করতে পারবেন না । সাইফন করতে গেলে মাছের বাচ্চা জলের টানে বাইরে বেরিয়ে যাবে ।



             

           ইনফিউজোরিয়া তৈরি করার পদ্ধতি দেখে নিয়ে সহজেই আপনি বাড়িতে এই খাবার তৈরি করে নিতে পারবেন ।

Comments

Popular posts from this blog

গাপ্পি মাছ ( guppy fish )

অ্যাকুরিয়ামের মাছের অসুখ ( aquarium fish diseases)

মাছ কি খেতে ভালো বাসে / অ্যাকুরিয়ামের মাছ কি ধরনের খাবার সব থেকে পছন্দ করে ( aquarium fish food ) ?