অ্যাকুরিয়ামের মাছের রং ভালো রাখার জন্য কি করবেন ( how to maintain your fishes color ) ।
বর্তমানে অ্যাকুরিয়ামে রঙ্গিং মাছ পোষার শখ বেড়েই চলেছে । যে কোন ঘরের শোভা বদলে দিতে পারে একটি অ্যাকুরিয়াম । অ্যাকুরিয়ামে যে মাছ গুলি রাখা হয় সেই মাছ গুলির প্রতিটি জাতের মাছের একটি স্বাভাবিক রং আছে , মাছ গুলি জন্মানোর পর থেকে ধিরে ধিরে মাছ গুলি যত বড় হতে থাকে , মাছের রং ও আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে । মাছের এই রঙ মাছের জিনের মধ্যেই থাকে , এই রং বাইরে থেকে করতে হয় না । বর্তমানে কিছু কিছু মাছ কিনতে পাওয়া যায় যেগুলি বাইরে থেকে রঙ করা হয় , সেই সব মাছ এর রং কিন্তু বেশি দিন থাকে না , তবে যে সমস্ত রঙ্গিং মাছ আমরা অ্যাকুরিয়ামে রেখে থাকি তার ৯৯ শতাংশই স্বাভাবিক রং ।বেসিরভাগ সময়ই দেখা যায় আপনি অ্যাকুরিয়ামের মধ্যে যে রঙ্গিং মাছ গুলি রেখেছেন তার রঙ ফেড বা হালকা হয়ে যাচ্ছে । মাছ গুলি আর দেখতে ভালো লাগছে না । আপনার পছন্দের মাছ গুলি যাতে এমন না হয় তার জন্য কিছু ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হয় । এই নিয়ম গুলি মেনে চললে আপনার অ্যাকুরিয়ামের মাছ গুলি রং ভালো থাকবে এবং আরো বাড়বে ।
১) আলো ( light ) ঃ মাছের রং ভালো রাখার জন্য আলো সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ । অ্যাকুরিয়ামে আলো র পরিমান কম থাকলে মাছের রং ফেড হয়ে যাবেই যাবে । অ্যাকুরিয়ামে আমরা সাধারনত যে সমস্ত জাতের মাছ রেখে থাকি সেই সমস্ত মাছের রং অনেকটাই ফেড হয়ে যাবে যদি সেই অ্যাকুরিয়ামে পর্যাপ্ত আলো না জ্বালানো হয় ( ব্যতিক্রম ঃআরোয়ানা , লোচ , ক্যাট ফিশ ইত্যাদি মাছের জন্য খুব বেশি আলোরঃপ্রয়োজন হয় না ) । এই আলোর পরিমান এমন হতে হবে যাতে ওই অ্যাকুরিয়ামে একটি জ্যান্ত গাছ ভালো ভাবে ফটো সিন্থেসিস করতে পারে । সকাল বেলা ৭ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত পর্যাপ্ত আলো অবশ্যই জ্বালিয়ে রাখতে হবে । সন্ধ্যা থেকে রাত্রি বেলা আলো নেভানো পর্যন্ত মৃদু আলো জালালেও হবে । যে রঙের আলোতে জ্যান্ত গাছ সব থেকে ভালো ফটো সিন্থেসিস করতে পারে , সেই রঙের আলো জ্বালাতে হবে ( আপনার অ্যাকুরিয়ামে জ্যান্ত গাছ থাকুক বা না থাকুক ) ।
২) খাবার ( food ) ঃ অ্যাকুরিয়ামের মাছেদের ভালো গুন মানের খাবার দিতে হবে । খাবারের মান ভালো না হলে মাছেদের রং কমে যেতে পারে । বর্তমানে অ্যাকুরিয়ামের দোকান গুলিতে ভালো ভালো কম্পানির তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার কিনতে পাওয়া যায় , মাছের রং ঠিক রাখার জন্য বিশেষ বিশেষ খাবারও কিনতে পাওয়া যায় , তার মধ্যে থেকে পছন্দ করে খাবার ব্যাবহার করতে পারেন । মাছেদের এক টানা এক খাবার না খাইয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার দিন , এতে মাছের রং ভালো থাকে । সপ্তাহে এক , দুই দিন কেনা খাবার না দিয়ে সিদ্ধ ভাতের দানা অল্প পরিমানে দিতে পারেন , এতে মাছের রং খুব ভালো থাকে । তবে মনে রাখবেন গলা ভাত দেবেন না , ভাতের দানা যেন গোটা গোটা থাকে , না হলে অ্যাকুরিয়ামের জল খারাপ হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকবে । সপ্তাহে একদিন ছোট এক টুকরো গাজর সিদ্ধ মাছেদের দিতে পারেন , তবে মনে করে না খাওয়া অংশ ২ /৩ ঘন্টা পরে তুলে নেবেন , না হলে জল খারাপ হয়ে যেতে পারে ।
৩) অ্যাকুরিয়ামের পরিবেশ ( aquarium decoration ) ঃ যে মাছ যেমন পরিবেশে থাকে তাকে তেমন পরিবেশে না রাখলে মাছের রং ফেড হয়ে যাবে , যেমন নিওন টেট্রা , সার্পে টেট্রা , এঞ্জেল , ডিসকাস প্রভৃতি মাছ রাখতে হলে অ্যাকুরিয়ামে জ্যান্ত গাছ লাগাতে হবে , না হলে এই সব জাতের মাছের রং অনেকটাই ফেড হয়ে যায় ,আবার আফ্রিকান সিক লিড জাতের মাছ রাখতে হলে অ্যাকুরিয়ামের ভিতরে কিছু বড় সাইজের পাথর দিয়ে সাজালে মাছের রং ভালো থাকে । যে জাতের মাছ যেমন পরিবেশ পছন্দ করে তাকে সেই পরিবেশে রাখলে রং ভালো থাকবে ।
৪) জল ( water condition ) ঃ মাছের রং ঠিক রাখার জন্য জল অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা নিয়ে থাকে । বিভিন্ন জাতের মাছ ভিন্ন ভিন্ন ধরনের জল পছন্দ করে । আপনি যে জাতের মাছ অ্যাকুরিয়ামে রাখবেন অ্যাকুরিয়ামের জলও সেইধরনের রাখতে হবে , যেমন নিওন টেট্রা , এঞ্জেল প্রভৃতি মাছ কম পি এইচ এবং সফট জল পছন্দ করে । তাই এই জাতের মাছ রাখতে হলে ওই ধরনের জল অ্যাকুরিয়ামে দিতে হবে । আবার কিছু জাতের মাছ আছে যারা বেশি পি এইচ এবং হার্ড জল পছন্দ করে সেই সব মাছ রাখতে হলে অ্যাকুরিয়ামে বেশি পি এইচ এবং হার্ড জল দিতে হবে । যখন অ্যাকুরিয়ামের মাছ কিনবেন সেই মাছ টি কোন ধরনের জলে থাকতে পছন্দ করে সেটা ভালো করে জেনে নিয়ে অ্যাকুরিয়ামে ঠিক তেমন জল দিলে মাছের রং ভালো থাকবে ।
৫) ছেলে মেয়ে ( male & female ) ঃ অ্যাকুরিয়ামে প্রতিটি জাতের মাছের ছেলে মাছের সঙ্গে মেয়ে মাছ অবশ্যই রাখবেন , মেয়ে মাছ দেখতে যতই খারাপ হোক মেয়ে মাছ না রাখলে ছেলে মাছ টির রং ভালো থাকবে না ।
৬) মাছের বয়স ( fish age ) ; মাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে গায়ের রং ও গাড় হতে থাকে । মাছের বয়স যখন কম থাকে মাছের গায়ের রং ও অনেক কম বা হাল্কা থাকে , বয়স বাড়ার সাথে সাথে মাছ টি যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয় ,তখন মাছের গায়ের রং ও গাড় হতে থাকে ।
৭) ব্রিডিং এর সময় ( breeding time ) ঃ কিছু কিছু জাতের মাছ আছে যাদের গায়ের রং সব থেকে বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে , যখন তাদের ডিম পাড়ার সময় হয় । যেমন রেমি রোসি , রোসি বার্ব , টাইগার বার্ব , জুয়েল সিক লিড , কনভিক্ট সিক লিড এর মতন আরো অনেক জাতের মাছ আছে , যাদের ডিম পাড়ার সময় হলে গায়ের রং ভীষণ রকমের উজ্জ্বল হয়ে ওঠে । মনে রাখবেন মাছের গায়ের এই ভীষণ উজ্জলতা শুধু ডিম পাড়ার সময়েই দেখা যায় , অন্য সময় এতটা উজ্জলতা থাকে না ।
Comments
Post a Comment