গোরামি মাছ অন্য মাছকে মারে কেন ?
এমনিতে গোরামি মাছ খুব শান্ত স্বভাবের মাছ , এরা যে সমস্ত মাছ গুলির সঙ্গে শান্ত
ভাবে মানিয়ে নিয়ে থাকতে পারে সেই সমস্ত মাছ গুলির সঙ্গে ভালোভাবেই থাকে , কিন্তু মাঝে
মধ্যে দেখা যায় হটাত করে এই মাছ গুলি অন্য মাছ গুলিকে ঠোকরাতে শুরু করেছে । কিছু কারনের
জন্য এটা হয় , কারন গুলি হল ঃ
১) যদি এই মাছের জোড়া টি মরে গিয়ে থাকে বিশেষ করে ফিমেল মাছটি ।
২) যদি অ্যাকুরিয়ামের জল খারাপ হয়ে গিয়ে থাকে ।
৩) যদি অ্যাকুরিয়ামের মধ্যে কোন মাছ অসুস্থ হয়ে থাকে । যদি আপনি দেখেন যে আপনার
অ্যাকুরামের মধ্যে কোন মাছ অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাহলে স্বত্বর ওই অসুস্থ মাছটিকে আপনার
অ্যাকুরিয়াম থেকে সরিয়ে ফেলবেন । না হলে বহু বার আমি লক্ষ্য করেছি একবার যদি গোরামি
মাছ ঠোকরাতে সুরু করে তাহলে সহজে থামতে চায় না । আর গোরামি মাছের স্বভাব ই হল কোন মাছ
অসুস্থ হলেই তাকে কামড়াতে সুরু করে ।
৪)যদি দুটি মেল অর্থাৎ পুরুষ মাছ হয়ে থাকে । আপনি এক সঙ্গে অনেক গুলি গোরামি মাছ
রাখতে পারেন কিন্তু ছেলে এবং মেয়ে মাছের অনুপাত সমান রাখবেন অথবা মেয়ে মাছের সংখ্যা
বেসি রাখবেন। এই জাতের ছেলে মাছ গুলি মেয়ে মাছ গুলির তুলনায় বেশী সুন্দর দেখতে হয়
, তাই অনেকে মাছ কেনার সময় ছেলে এবং মেয়ে মাছের অনুপাতের দিকে খেয়াল রাখেন না । সব
সময় খেয়াল রাখবেন গোরামি মাছ একটি ছেলে মাছের সঙ্গে একটি মেয়ে মাছ যেন হয় । আরও ভালো
হয় যদি আপনি একটি ছেলে মাছের সঙ্গে দুটি মেয়ে মাছ
রাখেন , সেটা যদি ভিন্ন জাতের গোরামি মাছ হয় তাতেও অসুবিধা নেই । তবে মনে রাখবেন
এই মিলমিশ কেবল মাত্র কসবি গোরামি , ব্লু গোরামি , গোল্ডেন গোরামি , অ্যালবিনো গোরামি
র মধ্যেই সীমাবধ্য । কিসিং গোরামি , পার্ল গোরামি ,জায়ান্ট গোরামি ইত্যাদি গোরামি মধ্যে
মিলিয়ে মিশিয়ে রাখলে হবে না । এই সমস্ত গোরামি গুলি একটি ছেলে মাছের সঙ্গে অন্তত একটি
মেয়ে মাছ অবশ্যই রাখতে ভুলবেন না , একটি ছেলে মাছের সঙ্গে একাধিক মেয়ে মাছ স্বছন্দে
রাখতে পারেন । তাতে এই মাছ খুব ই ভালো থাকবে এবং মারামারি করবে না ।
৫) যদি আপনি গোরামি জাতের মাছ আপনার অ্যাকুরিয়ামে রাখতে চান , তাহলে আপনার অ্যাকুরিয়ামে
অবশ্যই জ্যান্ত গাছ রাখবেন । এই মাছ ভালো ভাবে বেঁচে থাকতে গেলে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে
শাক সব্জি জাতীয় খাবার এবং সবুজ অ্যাল্গির প্রয়োজন হয় । যদি আপনার অ্যাকুরিয়ামে জ্যান্ত
গাছ অথবা সবুজ অ্যাল্গি এর কোনটাই না থাকে তাহলে এই মাছ শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পরে
এবং মারমুখি হয়ে ওঠে । অনেক সময় মাছ রোগা হয়ে যায় এবং শুকিয়ে যেতে থাকে বিশেষত কিসিং
গোরামির ক্ষেত্রে এটা বেশী দেখতে পাওয়া যায়। আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করে যে তারা কিসিং
গোরামি কিনে নিয়ে গিয়ে তাদের অ্যাকুরিয়ামে ছাড়ার পরে মাছ হয় খেতে চায় না অথবা মাছ শুকিয়ে
ছোট হয়ে মরে যাচ্ছে । তাদের জন্য আমার পরামর্শ এটাই যে আপনারা আপনাদের অ্যাকুরিয়ামে
জ্যান্ত গাছ রাখুন এবং অ্যাকুরিয়ামে এমন আলো ব্যাবহার করুন যাতে জ্যান্ত গাছ বেঁচে
থাকতে পারে এবং অ্যাকুরিয়ামের ভিতরে অল্প সবজ অ্যাল্গি জন্মায় । এর ফলে গোরামি মাছ
তাদের প্রয়োজনীয় সবুজ খাদ্য সহজেই অ্যাকুরিয়ামের ভিতরে পেয়ে যেতে পারে । এতে আপনার
মাছ গুলি সুস্থ সবল থাকবে এবং মারামারি করবে না ।
৬) অ্যাকুরিয়ামের জলে নাইট্রোজেনের পরিমান বাড়তে দেবেন না । অ্যাকুরিয়ামের জলে
নাইট্রোজেনের পরিমান বেড়ে গেলে এই জাতের মাছ মারমুখি হয়ে ওঠে । আপনি প্রতি সপ্তহে একবার
জলের নাইট্রোজেন মাপার কিট দিয়ে জলের নাইট্রোজেন এর পরিমান মেপে নিতে পারেন । তবে সহজে
ই আপনি জলের নাইট্রোজেনের পরিমান বেড়ে গেছে কিনা দেখে নিতে পারেন একটি সামান্য জিনিস
লক্ষ করে , যেটা হল আপনি প্রতিদিন মাছেদের খেতে দেবার আগে আপনার অ্যাকুরিয়ামের জলের
উপরিভাগ লক্ষ করে দেখবেন যে জলের উপরে মিহি মিহি গ্যাঁজা ভেসে রয়েছে কিনা । এই গ্যাঁজা
আপনি বেশী দেখতে পাবেন অ্যাকুরিয়ামের কাঁচের গায়ের দিকে । জলে যদি গ্যাঁজা দেখতে পান
তাহলে বুঝবেন ওই জলে নাইট্রোজেন বেশী রয়েছে । এমন অবস্থা হলে অ্যাকুরিয়ামের জল অন্তত
৩০ ভাগ বদল করে দিন । আর যদি দেখেন কাঁচের গায়েও আছে আবার জলের মাঝ খানেও গ্যাঁজা রয়েছে
তাহলে বুঝবেন ওই জলে অনেক বেশি পরিমানে নাইট্রোজেন রয়েছে , এমন দেখলে অ্যাকুরিয়ামের
জল অন্তত ৫০ ভাগ জল বদল করে দেবেন । এতে জলের
নাইট্রোজেনের পরিমান অনেকটাই কমে যাবে ।
৭) গোরামি মাছকে তার প্রয়োজন মতন পি এইচ
এবং হার্ড নেসের জলে রাখুন । এই মাছের জল পছন্দ না হলে আক্রমণাত্মক হতে পারে ।
৮) এই মাছ খুব পরিস্কার জলে থাকতে ভালোবাসে, তাই এই মাছ পুষতে হলে জল অবশ্যই পরিস্কার
রাখবেন ।
Comments
Post a Comment