টাইগার বার্ব ( বার্বাস টেট্রাজোনা )
টাইগার বার্ব এর প্রাপ্তিস্তান কোথায় ? এশিয়া মহাদেশের সুমাত্রা , ইন্দোনেশিয়া, জাভা, বোর্নিও, প্রভৃতি দেশের ঝর্না ,জলাশয়, নদীতে এই মাছ দেখতে পাওয়া যায়।
টাইগার বার্ব মাছ কতদিন বাঁচে ( life span) ? আমার অভিগ্যতা থেকে আমি এই মাছ চার বছর পোর্যন্ত বেঁচে থাকতে
দেখেছি ।
টাইগার বার্ব কত প্রজাতির হয় ( SPECIES)? টাইগার বার্ব
সাধারণত তিন প্রজাতির দেখতে পাওয়া যায়। লাল সাদা এবং সবুজ রং এর।
টাইগার বার্ব কত বড় হয় (SIZE)? এই মাছ তিন ইঞ্চি পর্যন্ত বড় হয়।
টাইগার বার্ব এর স্বভাব চরিত্র কেমন হয়? টাইগার
বার্ব এর প্রকৃতি কেমন?
টাইগার বার্ব খুব ছট ফটে স্বভাবের হয়। সারাদিন ধরে অ্যাকরিয়াম এদিক থেকে ওদিক আবার ওদিক থেকে এদিক
ঘুরে বেড়ায় । এই মাছ এক সঙ্গে আট দশটা রাখলে ঝাঁক
বেঁধে ঘুরে বেড়ায় ,দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। প্লান্টেড আকুয়ারিয়ামে এই মাছ রাখা যায়। এই মাছ গাছ নষ্ট করে না।তবে মাছ সব ধরনের মাছেদের সঙ্গে রাখা
যায় না , কারন এদের অন্য মাছের লেজ ঠোকরাবার স্বভাব আছে। এইমাছ এক সঙ্গে ৬ টির বেশি রাখলে সাধারনত ঠোকরায় না।
টাইগার বার্ব মাছের মেজাজ কেমন হয় (
temperament)? সাধারনত সোশাল অর্থাৎ যে সমস্ত মাছেদের সঙ্গে এদের রাখা যায়
তাদের সঙ্গে ভালভাবে মিলে মিশে থাকে।কিন্তু মাঝে মধ্যে এক দুটি মাছ আক্রমনাত্মক হয়ে উঠতে দেখা যায়।
টাইগার বার্ব কোন কোন মাছেদের সঙ্গে রাখা যায় ( compatible)?
এই মাছ যে সমস্ত মাছেদের সঙ্গে রাখা
যায় সেগুলি হল ১) মলি ২)সোর্ড টেল ৩) টেট্রা প্রজাতি ৪) গাপ্পি ৫) রোসি বার্ব , সুমার্টি বার্ব এবং অন্যান্ন ছোটো জাতের বার্ব,৬)ছোটো জাতের ক্যাট ফিশ ৭)ছোটো জাতের ক্রোকোডাইল ৮) রেইনবো জাতের মাছ যেমন পিকক রেইনবো, বস মনি রেইনবো,রেড রেইনবো ,স্কারলেড রেইনবো ইত্যাদি ,৯)সিল্ভার সার্ক ,রেড টেল সার্ক, ব্লাক রেইনবো ,সার্ক ,অ্যালবিনো রেইনবো সার্ক ,ইত্যাদি ,গোরামি জাতের মাছ যেমন পার্ল গোরামি ,কসবি গোরামি , কিসিং গোরামি ইত্যাদি ।
টাইগার বার্ব মাছ কোন কোন মাছের সঙ্গে রাখা যায় না ( not compatible) ? এই মাছ যে সমস্ত মাছ এর সঙ্গে রাখা উচিত নয় সেগুলি হল ১) গোল্ড ফিশ ,২) কার্প প্রজাতির মাছ ৩)এঞ্জেল ৪)ডিসকাস ৫)অস্কার ৬)সিভোরাম ৭)প্যারট ৮)যে কোন ধরনের আফ্রিকান সিক লিড ৯)যে কোন বড় জাতের ক্যাট ফিশ ইত্যাদি।
টাইগার বার্ব মাছ এর খাদ্য কি? টাইগার বার্ব কোন কোন খাবার বেশি পছন্দ করে ?(foods and feeding) এই মাছ জ্যান্ত এবং শুকনো দুই ধরনের খাবার ই বেশ ভাল বাসে।জান্ত খাবার এর মধ্যে কেঁচো ,ব্লাড ওয়ার্ম ,মশার লার্ভা খেতে খুব ভালবাসে । আর শুকনো খাবার এর মধ্যে বিভিন্ন ভাল কম্পানির ফ্রিজ ড্রাই খাবার
এবং প্যালেট ফুড
, ফ্লেক ফুড সবই এই মাছ খেতে পারে । তবে খেয়াল রাখবেন যদি আপনার অ্যাকুরিয়াম এ ছোট সাইজের মাছ রাখেন
তাহলে দানা খাবার (micro pallet) ব্যাবহার করা ভাল , কারন এই খাবার এর খুব ছোট ছোট দানা খেতে সুবিধা হয়
।
টাইগার বার্ব মাছ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা
কত (
temperature) ? ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড
তাপমাত্রায় এই মাছ ভাল থাকে।
টাইগার বার্ব মাছ রাখার জন্য কত ( ph) দরকার ? এই মাছ একটু অ্যাসিটিক জল পছন্দ করে । এই মাছ ৬ থেকে ৬.৫ ( ph) এ ভাল থাকে।
টাইগার বার্ব মাছ এর জন্য কত বড় অ্যাকুরিয়াম প্রয়োজন( size) ? এই মাছ ছোট সাইজের হলে ২০ লিটারের অ্যাকুরিয়াম এ রাখা সম্ভব
হলেও এই মাছ বড় হলে অন্তত ৪০ লিটার এর অ্যাকুয়ারিয়াম বা তার থেকেও বড় হলে ভাল । তাহলে এই মাছ ভাল ভাবে চলে ফিরে বেড়াতে পারে এবং দেখতেও ভাল
লাগবে ।
টাইগার বার্ব মাছ রাখার জন্য কেমন জল
দরকার হয় ? এই মাছ রাখার জন্য
সফট জল প্রয়োজন
অর্থাৎ যে জলের হার্ডনেস ৫০ মিলি থেকে ১০০ মিলি গ্রাম /প্রতি লিটার হয়।
টাইগার বার্ব মাছ রাখার জন্য অ্যাকুরিয়াম এ কি ধরনের পাথর (substrate) ব্যবহার করা ভাল ? এই মাছ রাখার জন্য যে কোন ধরনের পাথর বা বালি ব্যবহার করা যায়।
টাইগার বার্ব রাখার জন্য জলের
ফ্লো থাকা কি প্রয়োজন? হ্যা অ্যাকুরিয়াম এর জলে হাল্কা ফ্লো
থাকলে এই মাছ খুব আনন্দে থাকে ।
টাইগার বার্ব মাছ এর জন্য কি ধরনের ফিল্টার প্রয়োজন
হয়? আন্ডার গ্রাভেল ফিল্টার ,বায়ো স্পঞ্জ ফিল্টার ,কর্নার ফিল্টার ,পাওয়ার ফিল্টার ,ওভার হেড ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন
তবে পাওয়ার ফিল্টার এবং টপ ফিল্টার বা ওভার হেড ফিল্টার ব্যবহার করলে অ্যাকুরিয়াম এর
জলে হাল্কা স্রোত তৈরি হয় যেটা এই মাছ খুব ভালবাসে ।
টাইগার বার্ব মাছের জন্য কি ধরনের আলো লাগানো ভাল (lightning)? এই মাছ যে কোন ধরনের আলোতে রাখা যায় তবে দিনের
বেলায় একটু জোরালো আলো ব্যবহার করলে এই মাছের রং খুব ভাল থাকে আবার সন্ধে বেলায় রাত্রি
বেলায় একটু মৃদু আলোতে এই মাছ খুব সুন্দর দেখতে লাগে । যে কোন
ভাল অ্যাকুরিয়াম লাইট ব্যবহার করুন।
টাইগার বার্ব মাছ ভাল রাখার জন্য জল পাল্টা বার পদ্ধতি ( water change) ? প্রতি সপ্তাহে ২৫ শতাংশ জল পরিবর্তন
করা সব থেকে ভাল এতে মাছ এর রং ,চেহারা ,এবং বৃদ্ধি সঠিক থাকে ।
টাইগার বার্ব মাছ এরর কি কি অসুখ বেশী হয় ? এর প্রতিকার কি? ( disease and treatment)। টাইগার বার্ব মাছ এর যে সমস্ত রোগ গুলি বেশি হয় সেগুলি হল ১) হোয়াইট স্পট ২) মাউথ ফাঙ্গাস ৩) পাখনা পচা বা লেজ পচা রোগ।
১) হোয়াইট স্পট ঃ এই রোগ হলে মাছ এর সারা
গায় সাদা সাদা ছোট পোস্তর দানার মতন দাগ দেখতে পাওয়া যায় । মাছ গা চুলকাতে থাকে , খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং নিস্তেজ হয়ে
পরে । যথা সময়ে চিকিৎসা না হলে মাছ মারা যায় ।
প্রতি কার ( treatment ): এই রোগ সাধারনত আবহাওয়ার পরিবর্তন এর কারনে হয় । জলের তাপমাত্রার হটাৎ’ পরিবর্তন এই
রোগের প্রধান কারন । এই রোগ খুব ছোঁয়াচে। এই রোগ হলে জলের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি
থেকে ৩১ ডিগ্রি করুন । ৫ গ্রাম মেরিন সল্ট প্রতি ১০ লিটার জলের হিসাবে অ্যাকুরিয়াম
এ মেশান এবং কোন ভাল কম্পানির আন্টি হোয়াইট স্পট মেডিসিন ব্যবহার করুন ।
২) মাউথ ফাঙ্গাস
( mouth fungus): এই রোগ হলে মাছ এর দুটো
ঠোঁট সাদা হয়ে যায় ।মাছ খাওয়া বন্ধ করে এক দুদিন
ঝিমিয়ে থাকে তারপর মারা যায় ।
প্রতিকার
( treatment ) ঃ এই রোগ সাধারনত হটাৎ” করে জলের ph এর পরিবর্তন ঘটলে হয়ে থাকে এছারা ঠাণ্ডা লেগেও এই রোগ হোয়ে থাকে ,জলের তাপমাত্রা
৩০ ডিগ্রি তে নিয়ন্ত্রণ করুন এবং অক্সিজেন এর পরিমান নিয়ন্ত্রণ করুন , তার পর ভাল কম্পানির অ্যান্টি মাউথ ফাঙ্গাস মেডিসিন ব্যবহার করুন ।
৩) পাখনা পচা বা লেজ পচা রোগ ( tail rot)ঃ এই রোগ তুলনা
মুলক কম হলেও যখন হয় ভীষণ ভাবে সংক্রামিত হয় । এই রোগ প্রধা নত খারাপ জলের কারনে হয় ,এই রোগ হলে প্রথমে অ্যাকুরিয়াম এর জল এবং ফিল্টার পরিস্কার করুন তারপর পরিমান মত আন্টি
ফাঙ্গাস ওষুধ ব্যবহার করুন ।
টাইগার বার্ব মাছ এর ছেলে মেয়ে চেনার উপায় কি ( male / female) ? এই জাতের মাছেদের ছেলে মাছ এর রং মেয়ে মাছের থেকে অনেক উজ্জল
হয় এবং মেয়ে মাছের চেহারা ছেলে মাছের থেকে অনেকটা চওড়া হয় , একটু ভাল করে নজর করলেই বুঝতে পারবেন
।
টাইগার বার্ব মাছ এর ডিম পাড়াবার পদ্ধতি কি ( breeding process) ?
এই জাতের
মাছের ডিম পাড়াবার জন্য যে সমস্ত জিনিস গুলি লাগবে সেগুলি হল কম পক্ষে ২০০ লিটার জল ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ট্যাঙ্ক ,একটি পাওয়ার ফিল্টার , নাইলনের ১০ , ১২ টি সাবান জালি অথবা নাইলন এর মপ ,অথবা শিকড় সমেত কচুরি পানা ভাল করে
ধুয়ে নিয়ে দেওয়া যেতে পারে , আর প্রয়োজন ১০ থেকে ১২ টি প্রাপ্ত বয়স্ক
মাছ যার মধ্যে ৪ থেকে ৫ টি পেটে ডিম ভর্তি মেয়ে মাছ এবং বাকি গুলি সুস্থ সবল ছেলে মাছ
ট্যাঙ্ক
এ জল ভরুন , জল দু দিন বাসি করুন ,ওই ট্যাঙ্ক এ মাছ গুলি ছাড়ুন ,জলে পাওয়ার ফিল্টার সেট করুন ,এর পর ওই ট্যাঙ্ক এ পানা গুলি ভাসিয়ে
দিন অথবা নাইলন এর মপ বা জালি গুলি ট্যাঙ্ক এর জলের উপর ভাগে অন্তত দুই জাগায় ভাসিয়ে
রাখুন । পর দিন ভোর বেলা মাছ গুলি ওই পানা বা
মপ এর গায়ে ডিম
পারবে ,এই মাছ এর ডিম গুলি শিকড় বা মপ এর গায়ে
আঠার মত আটকে থাকবে । ডিম পাড়া হয়ে গেলে সাথে সাথে বড় মাছ
গুলি তুলে ফেলবেন , না হলে মাছ গুলি নেজেদের ডিম গুলি দ্রুত খেয়ে ফেলতে থাকবে । ডিম গুলি ওই জলে ওই ভাবেই রেখে দেবেন
ওই জলে একটু আন্তি ফাঙ্গাস ওষুধ দেবেন ,৬ থেকে ৮ ঘন্টা পর পাওয়ার ফিল্টার তুলে নেবেন , বদলে এয়ার পাম্প দ্বারা একটি হাল্কা করে বুদ বুদ চালাবেন । ট্যাঙ্ক টি এক্ টি কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেবেন । ১৮ থেকে ২৬ ঘণ্টা র মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় ।বাচ্চা ফোটার সময় নির্ভর করে জলের তাপমাত্রা র উপর । বাচ্চা ফুটে গেলে খুব মিহি ডাফনিয়া
খেতে দিতে হবে । ব্রাইন স্রিম্প চিংড়ির ডিম ফুটিয়েও খেতে দিতে পারেন
টাইগার
বার্ব মাছ পোষার জন্য কিছু জরুরী পরামর্শ ( tips)
১) জল সবসময় পরিস্কার করে রাখুন ।
২)সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখুন ।
৩)জ্যান্ত গাছ লাগান ।
৪)অন্তত ৬ টি টাইগার বার্ব এক সঙ্গে রাখুন । মারামারি করবে না
।
৫) বিশেষত শীত কালে এবং বর্ষা কালে অ্যাকুরিয়ামের অক্সিজেনের সরবরাহ অবশ্যই নিওন্ত্রন করবেন ।
৫) বিশেষত শীত কালে এবং বর্ষা কালে অ্যাকুরিয়ামের অক্সিজেনের সরবরাহ অবশ্যই নিওন্ত্রন করবেন ।
Awsome...
ReplyDelete