ফিল্টার ম্যাচুরেসান ( filter maturation )
যারা অ্যাকুরিয়ামে মাছ পোষেন বা যারা নতুন মাছ পোষার সখ শুরু করতে চলেছেন
, তাদের কাছে এই অধ্যায় সব থেকে গুরুত্বপূর্ন
। কারন এই অধ্যায় সঠিক ভাবে না করা হলে জল ঘোলা হবার এবং হটাত করে মাছ মারা যাবার সম্ভাবনা
অনেকটাই বেশি থেকে যায় ।
প্রথমে জানা যাক , ফিল্টার করা বলতে কি বোঝা যায়। ফিল্টার করার অর্থ
হল পরিস্কার । অ্যাকুরিয়ামে আপনি যে ধরনের ফিল্টার দেখে থাকেন , সেই ফিল্টার গুলি কে
সাধারনত দুই ভাগে ভাগ করা যায় ১ম টি হল বায়োলজিক্যাল ফিল্টার এবং.২য় টি হল কেমিক্যাল
ফিল্টার।
বায়োলজিক্যাল ফিল্টার ঃ এই ফিল্টার এর ফিল্টার করার পদ্ধতি হল বায়োলজিক্যাল
পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ফিল্টার ভিতর দিয়ে জল ঢোকা এবং বেরোবার মাধ্যমে জল পরিস্কার হয়
। এখন জানা যাক কিভাবে এই ফিল্টার জল পরিষ্কার করে । একদিক দিয়ে জল ঢুকল আর অন্য দিক
দিয়ে বেরিয়ে গেলেই তো আর জল পরিষ্কার হবে না , পরিস্কার করার জন্য লাগবে একটি মাধ্যম যে মাধ্যম এর ভিতর দিয়ে জল প্রবাহিত হলে জলের ভিতরকার
ময়লা গুলি ওই মাধ্যমের মধ্যে আটকে যায় এবং ঐ মাধ্যমের মধ্যে কিছু উপকারি ব্যাক্টেরিয়ার
উপস্থিতিতে আটকে যাওয়া ময়লা গুলির শোধন ঘটে । বাইরে থেকে এই শোধন পক্রিয়া দেখা না গেলেও ঐ খানে
উপস্থিত কোটি কোটি উপকারি ব্যাক্টেরিয়া এই ময়লা পরিস্কারের কার্যক্রমটি চালনা করে থাকে। এখন জানা যাক এই ব্যাক্টেরিয়া গুলি আসে কোথা থেকে ,
এই ব্যাক্টেরিয়া গুলি প্রাকৃতিক নিয়মে ই অ্যাকুরিয়ামের মধ্যে জন্মায় , তবে এর জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় , প্রাথমিক
ভাবে অ্যাকুরিয়ামে জল ভরার পর ঐ জলে
প্রথমেই যে বায়োলজিক্যাল ফিল্টার টি নিয়ে আলোচনা করবো তার নাম আন্ডার গ্রাভেল
ফিল্টার। এই ফিল্টার টি হল প্লাস্টিকের তৈরি জালের মতো একটি আধ খানা পাতলা বাক্সের
মত। অ্যাকুরিয়ামের তলার কাঁচের উপর এই ফিল্টারটি বসানো হয়। তারপর ওই ফিল্টারটি কিছু
নুড়ি বা পাথর দিয়ে চাপা দেওয়া হয়। ফিল্টারটির একদিকে একটি এয়ার লিফট পাইপ লাগানো থাকে
।এবার ওই ফিল্টারটির সঙ্গে একটি এয়ার পাম্প যোগ করা হয় । ওই পাম্প টি চালানো হলে জল
ওই ফিলতারের জালের ভিতর দিয়ে ঢুকে এয়ার লিফট পাইপের মুখ থেকে বেরোতে থাকে । এই পদ্ধতিতে
জলের ময়লা জালের ওপরে রাখা নুড়ি বা পাথরের ভিতর দিয়ে ঢুকে ওই জালের ভিতরের ফাঁকা জায়গায়
জমা হয়।এই ভাবে চলতে চলতে ফিল্টার এর উপরের নুড়ি পাথর গুলির গায়ে কিছু উপকারি ব্যাকটেরিয়া
জন্মায় । ওই উপকারি ব্যাকটেরিয়া গুলি অ্যাকুরিয়ামের জলের বিষাক্ত পদার্থ গুলি নস্ট
করে দেয়। ওই উপকারি ব্যাকটেরিয়া গুলি যতক্ষন পর্যন্ত আপনার অ্যাকুরিয়ামে না জন্মাচ্ছে
ততক্ষন পর্যন্ত আপনার অ্যাকুরিয়ামের জল পরিস্কার হবেনা এবং আপনার অ্যাকুরিয়ামে মাছ
মারা যাবার সম্ভাবনা থেকে যাবে । তার মানে হল এটাই যে একটি ফিল্টার অ্যাকুরিয়ামে বসিয়ে
দিলেই জল পরিস্কার হয়ে যাবে না । জলে উপকারি ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর সময় এবং সুযোগ দিতে
হবে ।
ঠিক একই ভাবে আপনি আপনার অ্যাকুরিয়ামে যে কোন বায়োলজিকাল ফিল্টার ব্যাবহার
করুন না কেন নিয়ম টা একই । সেটা তুলো ফিল্টার ই হোক বা স্পঞ্জ ফিল্টার । তুলোর উপরিভাগে
বা স্পঞ্জ এর উপরিভাগে একই ভাবে উপকারি ব্যাক্টেরিয়া জন্মায় ।
এই উপকারি ব্যাক্টেরিয়া গুলি প্রাকৃতিক ভাবে জন্মাতে ৩৬ থেকে ৪৫ দিন
সময় লাগে । হ্যাঁ ঠিক পড়েছেন ৩৬ থেকে ৪৫ দিন । এর পর থেকে অ্যাকুরিয়ামের জল পরিস্কার থাকবে
এবং মাছ ভালো থাকবে ।
এবার আসি ক্যেমিকাল ফিল্টার এর প্রসঙ্গে , কেমিক্যাল ফিল্টার বলে আলাদা কোন ফিল্টার হয় না । কিছু ক্যেমিকাল পাওয়া যায় জেগুলি জল পরিস্কারে সাহায্য
করে যেমন অ্যাক্টিভেটেড কার্বন, জিওলাইট, ম্যানফ্যান্সি স্টোন ইত্তাদি। এই সব ক্যেমিকাল
গুলি যদি কোন ফিল্টার এর মধ্যে ব্যাবহার করা হয় তবে সেই ফিল্টার টিকে ক্যেমিকাল ফিল্টার
বলা হবে । অনেক সময় বায়োলজিকাল ফিল্টার এর সঙ্গেও ক্যেমিকাল ব্যাবহার করা হয় , তখন
ওই ফিল্টার টিকে বলা হয় বায়োক্যেমিকাল ফিল্টার । তবে আমার প্রায় ৩০ বছরের অভিজ্ঞতায়
দেখেছি ,যতই আপনি ক্যেমিকাল ফিল্টার ব্যাবহার করুন না কেন সেই ৩৬ থেকে ৪৫ দিন পরেই
জল ঠিক ঠাক পরিস্কার হয় এবং মাছ ভালো থাকে । তবে একথা ঠিক বায়োক্যেমিকাল ফিল্টার ব্যাবহার
করলে আপনার অ্যাকুরিয়ামের জল খুবই ভালো থাকবে এবং মাছ সব থেকে ভালো থাকে।
বর্তমানে অ্যাকুরিয়ামের দোকান গুলিতে অ্যাকুরিয়ামের
উপকারি ব্যাক্টেরিয়া কিনতে পাওয়া যায় । সঠিক পরিমানে ওই ব্যাক্টেরিয়া আপনি আপনার অ্যাকুরিয়ামে
ব্যাবহার করলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অ্যাকুরিয়ামের জল পরিস্কার হয়ে যায় এবং মাছ ছাড়ার উপযোগী
হয়ে যায় ।
Comments
Post a Comment