কম খরচে প্ল্যানটেড অ্যাকুরিয়াম কিভাবে করবেন

  সাধারনত একটি প্ল্যান্টেড অ্যাকুরিয়াম তৈরি করার খরচ অনেক এবং কষ্টসাধ্য । হ্যাঁ এটা ঠিক যে কম পয়সায় যে প্ল্যান্টেড অ্যাকুরিয়াম তৈরি করা যায় তাতে বেশ কিছু ধরনের ঘাস বা মস বা বেশ কিছু ধরনের গাছ রাখা হয়ত যাবে না কিন্তু সহজে এবং খুবই কম পয়সায় যে প্ল্যান্টেড অ্যাকুরিয়াম তৈরি করা যাবে সেটি ও দেখতে কিন্তু খুব ই সুন্দর হবে এবং ওই অ্যাকুরিয়াম মেন টেন করা সহজ এবং অনেক কম খরচে করা যাবে ।


 এখন দেখে নেওয়া যাক এই অ্যাকুরিয়ামটি তৈরি করার জন্য কি কি জিনিস লাগবে ।

১) কিছু পরিমান পাথর , প্রতি ১ স্কোয়ার ফুট অ্যাকুরিয়ামে ৫ কে জি পাথর লাগবে । তবে এই অ্যাকুরিয়ামে মোজাইক এর পাথর বা কোন রং করা পাথর দেবেন না । যা পাথর ই দিন না কেন  ন্যাচারাল পাথর ব্যাবহার কবেন , লাল বালি চালুনি দিয়ে চেলে নিয়ে যে পাথর বার হবে তার থেকে একদম বড় গুলি বেছে ফেলে দিয়ে  , ওই পাথর আপনি ভালো ভাবেই ব্যাবহার করতে পারবেন । মনে রাখবেন এই অ্যাকুরিয়ামে কিন্তু কোন ভাবেই বালি বা খুব মিহি পাথর ব্যাবহার করবেন না । বালি দিলে গাছ বসানোর জন্য যে বেড টি অ্যাকুরিয়ামের তলায় তৈরি করতে হবে সেটি সলিড হয়ে যাবে । সলিড বেডে অ্যাকুরিয়ামের গাছ হয় না । গাছ বসাবার জন্য একটু আলগা বেড দরকার হবে । সেই কারনে এই অ্যাকুরিয়ামের জন্য ছোট দানার পাথর বা একটু মিডিয়াম দানার পাথর সব থেকে ভালো ।

২) প্রতি ১ স্কোয়ার ফুট অ্যাকুরিয়াম পিছু ১ থেকে ২ লিটার অ্যাকুরিয়াম সয়েল ।


৩) একটি  ভালো উজ্জ্বল আলো,আপনি বাল্ব , সি এফ এল, বা টিউব লাইট যা ইচ্ছা ব্যাবহার করতে পারেন । শুধু মনে রাখবেন আলো যেন অ্যাকুরিয়ামের গাছ বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট  উজ্জ্বল হয় । আলো আপনি সাদা , হলুদ , নীল , বেগুনি যে কোন রঙের ব্যাবহার করতে পারেন , কিন্তু ভুল করেও সবুজ আলো লাগাবেন না । অ্যাকুরিয়ামে সবুজ আলো লাগালে একটাও গাছ বাঁচবে না । 

৪) অ্যাকুরিয়ামের ঢাকার ভিতর দিকে কোন চকচকে রুপলি রঙের কাগজ আঠা দিয়ে আঁটকে দিতে পারেন এতে আ্যকুরিয়ামে আলোর উজ্জলতা অনেকটাই বেড়ে যাবে ।

৫) সফট জল ঃ অ্যাকুরিয়ামে সফট জল দিতে হবে । এই আ্যকুরিয়ামে হার্ড জল দেবেন না । হার্ড জল দিলে গাছের বৃদ্ধি অনেকটাই কম হবে ,এমনকি গাছ মারাও যেতে পারে । 
সহজে সফট জল চেনার উপায় হল , দেখে নিন কোন জলে কাপড় কাচলে  কাপড় বেশি পরিস্কার হয় বা ভাত রান্না করলে সাদা হয় বা ডাল সহজেই গলে যায় । 

৬) ফিল্টার ঃ একটি ছোট পাওয়ার ফিল্টার বা ওভার হেড / টপ ফিল্টার । মনে রাখবেন ফিল্টার লাগিয়ে জলের স্রোত যেন বেশি না হয় । জলের বেশি স্রোত হলে প্রাথমিক অবস্থায় গাছ গুলি অ্যাকুরিয়ামের বেড থেকে উপড়ে যাবে এবং কিছু দিন  পরে হলেও  গাছ বাড়বে না ।


৭) জ্যান্ত গাছ ঃ এই ধরনের অ্যাকুরিয়ামে এমন ধরনের গাছ লাগাবেন যে গাছ গুলি বেশ শক্ত ধাঁচের , যেমন ভ্যালিসেনেরিয়া , হাইড্রোফিলা , বাকোপা , হাইড্রোকোটাইল , কাবাম্বা , আমাজন , ক্রীপ্টোকোরিন , অ্যানুবিয়াস প্রভৃতি । এই জাতের গাছ গুলি যথেষ্ট  শক্ত পোক্ত এবং  এই জাতের গাছ গুলি বিভিন্ন ধরনের পাওয়া যায় , যেমন  ভ্যালিসেনেরিয়া ৩ / ৪ রকমের পাওয়া যায় , আমাজন ৮ / ১০ রকমের পাওয়া যায় , হাইড্রোকোটাইল  , বাকোপা , অ্যানুবিয়াস প্র ভৃতি গাছ গুলিও অনেক ধরনের পাওয়া যায় । এর মধ্যে থেকে বিভিন্ন ধরনের গাছ পছন্দ করে আপনি আপনার অ্যাকুরিয়ামে বসাতে পারেন ।

৮) ফার্টিলাইজার ঃ অ্যাকুরিয়ামেরর দোকান গুলিতে  অ্যাকুরিয়ামের গাছের জন্য লিকুইড ফার্টিলাইজার  পেয়ে যাবেন । তবে এটা মনে রাখবেন যে ধরনের গাছ আপনি অ্যাকুরিয়ামে বসাবেন তার উপযুক্ত ফার্টিলাইজার কিনবেন ,

৯) বড় পাথর বা অ্যাকুরিয়ামে দেবার কাঠ ঃ সাজাবার জন্য কয়েকটি বড় পাথর বা বগ উড বা ড্রিফট উড ।


ব্যবহার বিধি ঃ

১) প্রথমে অ্যাকুরিয়ামে অর্ধেক এর বেশি জল দিন ,

২) পাথর গুলি ভালো করে ধুয়ে নিয়ে অ্যাকুরিয়ামের ভিতরে  ছড়িয়ে দিন । পাথর গুলি একটু সাজিয়ে নিন , যেমন অ্যাকুরিয়ামের পিছন দিকে একটু বেশি পাথর দিয়ে সামনের দিকে একটু পাতলা করে পাথর দিতে পারেন আবার অ্যাকুরিয়ামের দুই দিকে একটু বেশি উচু করে দিতে পারেন  বা মাঝ খানে উচু করে দিতে পারেন ,  অথবা আপনি আপনার নিজের মতন করেও একটু উচু নিচু করে সাজিয়ে নিতে পারেন , এতে দেখতে ভালো লাগবে ।

৩) অ্যাকুরিয়াম সয়েল পাথরের উপরে ছড়িয়ে দিন 

৪) যদি ২ /৪ টি বড় পাথর বা অ্যাকুরিয়াম এর কাঠ  সাজা বার জন্য দিতে  চান , তাহলে পছন্দ মতন জায়গায় বসিয়ে দিন ।

.৫)অ্যাকুরিয়ামে জল প্রয়োজন মত ভর্তি করে দিন ।  এই সময় জল  আস্তে আস্তে ঢালবেন , যাতে অ্যাকুরিয়ামের তলা ঘেঁটে না যায় ।

৬) কম করে ১৫ দিন এই ভাবে রেখে দিন ।

৭) এর পর আপনি আপনার পছন্দ মতন গাছ অ্যাকুরিয়ামের মধ্যে বসিয়ে দিন ।

৮) অ্যাকুরিয়ামের মধ্যে গাছ গুলি ভালোভাবে শিকড় ধরে বসার জন্য আরো ১৫ দিন রেখে দিন ।

৯) গাছ বসাবার ১ম দিন থেকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অ্যাকুরিয়ামের আলো জ্বালিয়ে রাখুন ।

১০) গাছ বসাবার ১৫ দিন পরে অ্যাকুরিয়ামে ফিল্টার বসাবেন । 

১১)  অ্যাকুরিয়ামে ফিল্টার লাগাবার ১০ থেকে ১২ দিন পরে মাছ ছাড়বেন ।


মনে রাখবেন ঃ

১) জ্যান্ত গাছ কেনার সময় ভালো মানের গাছ কিনবেন , পুকুর থেকে বা খাল বিল থেকে তুলে আনা গাছ বসাবেন না । এতে অনেক ধরনের পোকামাকড় আসতেপারে । প্রকৃতি থেকে তুলে আনা গাছ অ্যাকুরিয়ামে ভালো ভাবে বাঁচতেও চায় না , কারন প্রকৃতিতে এই সব গাছ গুলি যতটা আলো পায় ততটা আলো অ্যাকুরিয়ামে দেওয়া সম্ভব হবে না । তাই সব থেকে ভালো হল অ্যাকুরিয়ামে এর জন্য যে গাছ গুলি চাষ করা হয়েছে সেই গাছ কেনা ।

২) অ্যাকুরিয়ামে কোন রকম অক্সিজেন সরবরাহ করবেন না । আ্যকুরিয়ামের জলে অক্সিজেন সরবরাহ করলে গাছ নষ্ট হয়ে যাবে । যদি কার্বন ডাই অক্সাইড সরবরাহ করতে পারেন ,সেটা গাছের পক্ষে খুবই ভালো কিন্তু এটা খরচ সাপেক্ষ ।

৩) অ্যাকুরিয়ামে এমন কোন মাছ ছাড়বেন না যে মাছ গাছ খেয়ে নিতে পারে ।

৪) কোন বড় জাতের মাছ ছাড়বেন না ।

৫) এমন পরিমানে মাছ রাখবেন , যাদের জন্য জলে অক্সিজেন দিতে না হয় ।

৬) সারা দিন আলো জ্বালিয়ে রাখবেন ।

৭)  নিয়ম মত জলে ফার্টিলাইজার দেবেন ।

৮) অ্যাকুইয়ামে অ্যাল্গা ইটার মাছ অবশ্যই রাখবেন ।

৯) অ্যাকুরিয়ামে মাছ ছাড়ার আগে পর্যন্ত একটি মশারি দিয়ে অ্যাকুরিয়ামটি ঢেকে রাখবেন  না হলে অ্যাকুরিয়ামের জলে মশা জন্মাতে পারে ।














Comments

Popular posts from this blog

গাপ্পি মাছ ( guppy fish )

অ্যাকুরিয়ামের মাছের অসুখ ( aquarium fish diseases)

মাছ কি খেতে ভালো বাসে / অ্যাকুরিয়ামের মাছ কি ধরনের খাবার সব থেকে পছন্দ করে ( aquarium fish food ) ?